তাকদীর বা অদৃষ্ট সম্পর্কে
২২৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জিবরাঈ’ল (আ) আমাকে বললে, মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ বলেছেন, “হে মুহাম্মদ! যে লোক আমার উপর বিশ্বাস (ঈমান) এনেছে, অথচ আমার দ্বারা ভাল-মন্দ নিয়ন্ত্রণে (অদৃষ্টে) বিশ্বাস রাখে না, সে যেন আমাকে ছাড়া আরেকজন প্রতিপালক খুঁজে নেয়।
২২৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। অতঃপর মহান আল্লাহ তাকে বললেন, “লিখ”। সে বলল, “হে আমার প্রতিপালক! কি লিখব?” তিনি বললেন, “কেয়ামত সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাকদীর (অদৃষ্ট লিপি)। যে লোক এর অন্যথায় প্রাণত্যাগ করে সে আমার দলভূক্ত নয়।”
২২৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান মর্যাদাশালী আল্লাহ বলেন, “যে যুবক আমার নির্ধারিত অদৃষ্টে বিশ্বাসী আর আমার নির্ধারিত লেখনীতে পরিতূষ্ট, আমার দেয়া জীবনোপকরণে পরিতৃপ্ত এবং আমার জন্য প্রবৃত্তির খায়েস পরিত্যাগী, সে যুবক আমার কাছে আমার কোন কোন ফেরেশতার মত।”
২৩০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করলেন, অনন্তর তার থেকে সন্তান-সন্ততি বের করলেন। এরপর আল্লাহ্ বললেন, “আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি বেহেশতের জন্য এবং এরা বেহেশতীদের আমল করবে।” তারপর তার পিঠে হাত বুলালেন এবং তা থেকে সন্তান-সন্ততি বের করলেন। তারপর বললেন, “আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য, আর তারা দোযখীদের আমল করবে।” এক সাহাবী জিজ্ঞেস করল, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! তবে আমল কি জন্য? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “নিশ্চয় মহান আল্লাহ কোন বান্দাকে যখন বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে বেহেশতীদের আমলে যুক্ত করেন। এমনকি সে বেহেশতীদের আমল করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তারপর আল্লাহ তাকে সে জন্য বেহেশতে প্রবেশ করান। আর কোন বান্দাকে যখন তিনি দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে দোযখীদের আমলে নিয়োজিত করেন, এমনকি সে দোযখীদের আমল করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অনন্তর আল্লাহ্ তাকে ওর বিনিময়ে দোযখে প্রবেশ করান।”
২৩১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “যে লোক আমার নির্ধারিত অদৃষ্টে সন্তুষ্ট নয়, এবং আমার বালা-মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করতে পারে না, তার উচিত সে যেন আমাকে ছাড়া অপর কোন রব খুজে নেয়।”
২৩২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ আদম (আ) কে সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করে তার ডান কাঁধে আঘাত করলেন, অতঃপর তার সন্তানদেরকে বের করলেন, তার এরূপ শেত-শুভ্র যেন মুক্তা সদৃশ উজ্জল দুধ। তারপর তিনি তার বাম কাঁধে আঘাত করলেন এবং কাল বর্ণের সন্তান বের করলেন, তারা যেন কাল কয়লা। অতঃপর তিনি তার ডান হাতের সন্তানদের বিষয়ে বললেন, “তারা বেহেশী হবেআর এতে আমার কোন পরোয়া নেই।” আর তার বাম হাতের তালুস্থিত সন্তানদের বিষয়ে বললেন, “তারা দোযখী হবে, আর এতে আমার কোন পরোয়া নেই।”
২৩৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- জিবরাঈল আমার কাছে এলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ) নিশ্চয় আপনাকে আপনার রব সালাম জানিয়েছেন আর বলেছেন-“নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে প্রাচুর্য ছাড়া যার ঈ’মান ঠিক থাকে না। তাকে যদি দরিদ্র করে দে’য়া হয় তবে অবশ্যই সে অবিশ্বাসী কাফের হয়ে যাবে। আর নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে, ফকিরী-দারিদ্রতা ছাড়া যার ঈ’মান ঠিক থাকে না। তাকে যদি ঐশ্বর্যশালী করে দেই তবে অবশ্যই সে কাফের হয়ে যাবে। আর নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে, সুস্থতা ছাড়া যারা ঈ’মান ঠিক থাকে না। যদি তাকে অসুস্থ করে দেই তবে অবশ্যই সে কাফের হয়ে যাবে।”
২৩৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করলেন, এরপর তাঁর পিঠ থেকে সন্তানদেরকে বের করলেন। অনন্তর বললেন, “এরা জান্নাতের জন্য, আর আমি কারো গ্রাহ্য করি না, আর এরা দোযখের জন্য, আমি কারো পরোয়া করি না। তখন আরয করা হল, “হে আল্লাহর রাসূল! কিসের আশায় আমরা আমল করব?” তিনি বললেন, “সূনির্ধারিত অদৃষ্টস্থলে পৌঁছার আশায়।”
২৩৫. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- শুক্র জরায়ুতে স্থান নেয়ার চল্লিশ রাত পরে ফেরেশতা শুক্রে প্রবেশ করেন এবং বলেন, “হে আমার রব, আমি কি লিখব, “দুর্ভাগ্যবান না সৌভাগ্যবান?” তখন আল্লাহ বাতলে দেন এবং দু’টির যে কোন একটি লেখা হয়। অতঃপর ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেন, “এ ছেলে না মেয়ে?” আল্লাহ্ তখন বাতলে দেন আর দু’টির একটি লেখা হয়। অনন্তর তার কর্ম, তার আচরণ, তার তাকদীর, তার জিবিক ও মৃত্যু লেখা হয়। অতঃপর পুস্তিকা বন্ধ করা হয়। তারপর তাতে যা লেখা হয়েছে। তার কিছু কম বেশি হয় না।”
২৩৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কোন এক স্থানে একটি পাথর পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল, “আমি আল্লাহ্ বাক্কার মলিক, আমি কল্যান ও অকল্যান সৃষ্টি করেছি। অতঃপর সৌভাগ্য তার জন্য, যার হাত দিয়ে কল্যাণ সৃষ্টি করেছি। আর ধ্বংস তার জন্য, যার হাত দিয়ে অকল্যান সৃষ্টি করেছি।”
২৩৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ) কে যেদিন সৃষ্টি করলেন, সেদিন তিনি তাঁর পিঠ থেকে এক মুঠো গ্রহণ করলেন। অনন্তর সব উত্তম তাঁর ডান হাতে পড়ল এবং সব খারাপ তাঁর অন্য হাতে পড়ল। তখন তিনি বললেন, এরা ডান পাশের অধিবাসী এবং আমি কারো অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে আদমের পিঠে ফিরিয়ে দিলেন। আর সে অনুসারেই আজো পর্যন্ত তাঁর বংশানুক্রম সৃষ্টি হচ্ছে।”
২৩৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আদমের সন্তান-সন্ততিকে তাঁর পিঠ থেকে বের করলেন, অতঃপর তাদের নিজের ব্যাপারেই সাক্ষী করে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি তোমাদের রব (প্রভু) নই?” তারা বলল, “হ্যাঁ” অতঃপর তিনি তাদেরকে তাঁর দু’হাতের তালুতে আন্দোলিত করলেন। অনন্তর বললেন, “এরা বেহেশতে যাবে; আর এরা দোযখে প্রবেশ করবে।” এরপর বেহেশতবাসীদের জন্য তাদের আমল সহজ করে দেয়া হবে।