জিহাদ সম্পর্কে
১৯৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমাদের প্রতিপালক সে লোকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যে আল্লাহ রাস্তায় জিহাদে অংশ নিয়েছে, অতঃপর তার সাথিরা পরাজিত হয়েছে। তখন সে বুঝতে পেরেছে তার পরিণামফল কি হবে, তথাপি সে পুনরায় জিহাদে শরিক হয়েছে এমনভাবে যে, রক্তপাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ স্বীয় ফেরেশতাদেরকে বললেন, “তোমরা আমার এ বান্দার দিকে খেয়াল করে দেখ, আমার কাছে যে পুরস্কার রয়েছে তাতে সে আকৃষ্ট হয়েছে এবং আমার কাছে যে অনুগ্রহ রয়েছে তা পাওয়ার আশায় সে আবার জিহাদে অংশ নিয়েছে। এমনকি সে তার জীবন উৎসর্গ করেছে।”
১৯৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেছেন, “আমার সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় আমার বান্দাদের মধ্যে যে আমার পথে জিহাদকারীরূপে ঘর থেকে বের হয়, যদি তাকে ফিরিয়ে আনি, তবে তাকে পুরস্কার ও গণীমতের মালসহ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমিই গ্রহণ করি, আর যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে তাকে মাফ করার, তার উপর অনুগ্রহ করার এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশের দায়িত্বও আমার।”
১৯৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ যখন হযরত মূসা (আঃ) কে ফিরাউনের বিরুদ্ধে প্রার্থনা করার অনুমতি দিলেন, তখন ফেরেশতাগণ ‘আমিন’ (কবুল করুন) বলল। তখন আল্লাহ্ বললেন, “তোমার প্রার্থনা কবুল করা হয়েছে এবং সে ব্যক্তির প্রার্থনা (মঞ্জুর হয়েছে) – যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, মুজাহিদদেরকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তোমরা সাবধান থেকো। কারণ, আল্লাহ্ তাদের অনুকুলে এরূপ রাগাম্বিত হন, যেরূপভাবে রাসূলগণের অনুকূলে রাগাম্বিত হয়ে থাকেন। আর আল্লাহ্ তাদের প্রার্থনা এমনভাবে মঞ্জুর করেন যেমনভাবে রাসূলগণের প্রার্থনা মঞ্জুর করে।”
১৯৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সামনে আবির্ভূত হলেন এবং বললেন, “তোমরা যা মনে চায় আমল কর, তোমাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি।”
১৯৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার রাস্তায় জিহাদকারীর কথা বলতে গেলে, সে আমার জিম্বায় রয়েছে। আমি যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে তাকে বেহেশতের উত্তরাধিকারী করি, আর যদি তাকে ফিরিয়ে আনি তবে তাকে পুরস্কার ও গনীমতসহ ফিরিয়ে আনি।”
শাহাদাত
২০০ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- শাহাদাতবরণকারীগণ আল্লাহর কাছে আল্লাহর আরশের ছায়া তলে ইয়াকুতের তৈরী মিম্বারের উপর অবস্থান করবে, যা মৃগনাভীর স্তুপের উপরে স্থাপিত হবে। সেদিন শুধুমাত্র তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে বলবেন, “আমি কি তোমাদের সাথে আমার ওয়াদা পুরণ করিনি এবং তা তোমাদের জন্য বাস্তবে রূপ দেইনি?” তারা তখন বলবে, “হ্যা আমাদের প্রতিপালকের কসম! তুমি অঙ্গিকার পুরণ করেছ।”
২০১ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় শহীদদের রূহগুলো সবুজ রংয়ের পাখিদের অন্তরে অবস্থান করে, তাদের জন্য আল্লাহর আরশ থেকে কতগুলো দীপাধার দান করা হয়েছে। তারা বেহেশতের অভ্যন্তরে যেখানে খুশি ভ্রমণ করে। তারপর এ দীপাধারগুলো কাছে অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নেয়। তখন তাদের রব তাদের প্রতি দৃষ্টি ফেলে বলেন, তোমরা আর কি চাও?” তখন তারা জওয়াব দেয়, “আমরা আর কি চাইবো? আমরা বেহেশতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমন করে থাকি।” অনন্তর আল্লাহ তিনবার এ প্রশ্ন করবেন। অতঃপর তারা যখন দেখবে যে, তাদেরকে এ প্রশ্ন বারবার করা হচ্ছে তখন তারা বলবে, “ইয়া পরওয়ারদেগার! আমরা এ বাসনা পোষণ করি যে, আপনি আমাদের আত্নাগুলো পুনরায় আমাদের দেহে ফিরিয়ে দিন, আমরা যেন পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে আবার আপনার দ্বীনের রাস্তায় শহীদ হতে পারি।” অতঃপর আল্লাহ যখন দেখবেন যে, (মূলত) তাদের কোন প্রয়োজন নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেবেন। মুসলিম এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২০২ . রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ওহে জাবির! আমি কি তোমাকে এ সুসংবাদ দেব না এ যে, আল্লাহ কিভাবে তোমার পিতার সাথে দেখা করেছেন? আল্লাহ কারও সাথে পর্দার আড়ালে ছাড়া কথা বলেন না। আর তিনি তোমার পিতাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে আমার বান্দা! আমার কাছে তোমার মনের ইচ্ছা প্রকাশ কর, আমি যেন তোমাকে তা দান করতে পারি।” তিনি (তোমার পিতা) বললেন, “হে আমার রব! আপনি কি আমাকে দ্বিতয়িবার জীবন দান করবেন, আমি যাত দিে্বতীয়বার আপনার পথে শহীদ হতে পারি?” মহান ও প্রতাপশালী রব রললেন, “আমার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিপূবেই ঘোষণা করা হয়েছে যে, মৃতকে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে পাঠানো হবে না।” তোমার পিতা বললেন, “হে আমার রব! তা হলে আমার পরবর্তীগণকে এ সংবাদ পৌঁছে দিন।”