আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) সম্পর্কে
১৩২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ হযরত আদম (আ)- কে বললেন, “হে আদম! আমি আমার আমানত আকাশসমূহ ও যমীনের প্রতি পেশ করেছিলাম। কিন্তু এরা তা বহনে সক্ষম হয়নি। তুমি কি এ আমানত ও তাতে যা কিছু রয়েছে তা বহনে প্রস্তুত আছ?” তিনি নিবেদন জানালেন, “আমার জন্য তাতে কি (প্রতিদান) আছে ইয়া রব্বী!” আল্লাহ বললেন, “তুমি যদি তা বহনে সক্ষম হও তবে তোমাকে প্রতিদান দেয়া হবে। আর তুমি যদি তা বিনষ্ট কর, তবে তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে।” আদম (আঃ) বললেন, “আমি তা বহন করলাম এবং তাতে যা কিছু রয়েছে তাও।” এর পরে আদম (আঃ) প্রথম নামায ও আসরের নামাযের মধ্যবর্তী সময়টুকু ছাড়া বেহেশতে অবস্থান করেননি, বরং শয়তান তাকে সেখান থেকে বের করে দিল।” আবুশ শায়খ এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ১৩৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, আমার কোন বান্দার পক্ষে এ দাবি করা ঠিক নয় যে, সে ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর।”
১৩৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমি যেন ইউনুস ইবনে মাত্তাকে দেখছি, তার দেহে দু’টি সূতীর চাদর রয়েছে। সে তালবিয়া পাঠ করছে, পাহাড়সমূহ জওয়াব দিচ্ছে (তার আওয়াজ পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে) আর মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ তাকে বলছেন, “আমি উপস্থিত আছি, হে ইউনুস! এই যে আমি তোমার সাথে রয়েছি।”
১৩৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ যখন আইউব (আ) কে মার্জনা করলেন, তার উপর সোনালি পঙ্গপাল বর্ষণ করলেন। আইউব (আ) সেগুলোকে তাঁর হাতে ধরতে লাগলেন এবং কাপড়ে জড়াতে লাগলেন। সে সময় তাকে বলা হল, “ওহে আইউব! তুমি কি পরিতৃপ্ত নও?” প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “তোমার অনুগ্রহ হতে কে তৃপ্ত হয়?”
১৩৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- হযরত আইউব (আ) একদিন বস্ত্রহীন অবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল পতিত হতে লাগল। হযরত আইউব (আ) সেগুলোকে তাঁর কাপড়ে জড়াতে লাগলেন। অনন্তর তার মহান ও মুবারক রব তাঁকে ডেকে বললেন, “হে আইউব! তুমি যা দেখছ তোমাকে কি তারচেয়ে সম্পদশালী করিনি?” তিনি আরজ করলেন, “হ্যাঁ। আপনার ইযযতের কসম! কিন্তু আমি আপনার দান ও বরকত থেকে অভাবমুক্ত নই।”
১৩৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন- “কেয়ামতের দিন জনৈক বান্দা একটি মাত্র পুণ্য নিয়ে উপস্থিত হবে। আমি তাকে তার বিনিময়ে বেহেশতে প্রবেশের নির্দেশ দেব।” দাউদ (আ) নিবেদন করলেন, “ইয়া রব! কে সে বান্দা? তিনি বললেন, “যে মু’মিন বান্দা তার মু’মিন ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণের জন্য দৌড়ে যায়। তার উদ্দেশ্য এ থাকে যে, মানুষের প্রয়োজন পুরণ হউক, তা তার হাতে হোক কিংবা আর কারো হাতে।”
১৩৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ্ আদম (আঃ) এর প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে বললেন, “হে আদম! তোমার উপর কোন নূতন বিপদ ঘটার আগে তুমি এ ঘরের হজ্জ সম্পন্ন করে নাও।” তিনি বললেন, “ইয়া রাব্বী! আমার উপর কি বিপদ ঘটবে!” তিনি বললেন, “যা কিছু জান না – অর্থাৎ মৃত্যু।” আদম (আ) নিবেদন করলেন, “মৃত্যু কি?” আল্লাহ বললেন, “অচিরেই তুমি এর স্বাদ আস্বাদন করবে।”
১৩৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ হযরত ঈসা ইবনে মরিয়াম (আ) এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে ঈসা! ইসরাঈ’ল বংশের নেতাদেরকে বলে দাও- যে লোক আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোযা রাখবে, আমি তাকে দৈহিক সুস্থতা দান করব এবং তার প্রতিদান বাড়িয়ে দেব।”
১৪০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন, “হে খলীল! তুমি তোমার আচরণ সুন্দর কর, যদি তা অবিশ্বাসীদের সাথেও হয়। তবে তুমি নেককারদের পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ আমার আমার উক্তি আগেই লেখা হয়েছে যে, যার আচরণ সুন্দর হবে তাকে আমার আরশের ছায়াতলে ছায়াদান করব, আমার পবিত্র বেহেশতের প্রকোষ্ঠে আমার নৈকট্য রাখব।”
১৪১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান হযরত আল্লাহ্ মূসা (আঃ) এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “নিশ্চয়ই তোমার সম্প্রদায় তাদের মসজিদসমূহ নির্মাণ করেছে। অথচ তাদের হৃদয়গুলো কলুষিত করে নিয়েছে। আর তারা এমনভাবে মোটাতাজা হয়েছে, শুকরগুলোকে হত্যার সময় যেমন মোটা হয়ে থাকে। আর নিশ্চয়ই আমি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেছি, অতঃপর তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছি। এতএব আমি তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব না এবং তাদেরকে তাদের কাম্য বস্তু দেব না।”