রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে
১১২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমাকে যখন আকাশ ভ্রমণে নেয়া হল, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। তখন আমি দেখতে পেলাম, আরশের ডান পাশে লেখা আছে- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, তাকে আমি মর্যাদা দিয়ে সাহায্য করেছি।”
১১৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ্ ইবরাহীম (আ)-কে খলীল (বন্ধু) রূপে, মূসা (আ)-কে নাজীর (গোপনীয় সম্বোধনের পাত্র) রূপে এবং আমাকে হাবিব (বিশেষ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমার নাজীর (মূসা)-এর উপর আমার হাবিব (বিশেষ বন্ধু) কে অগ্রাধিকার দেব।”
১১৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমার কাছে জিরাঈ’ল এলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই আমার ও আপনার প্রতিপালক আপনাকে বলেন, আপনি জানেন কি কিরূপে আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি? আমি বললাম, আল্লাহ্ সর্বাপো ভাল জানেন। তিনি তখন (আল্লাহ) বললেন, আমার যিকির করা হয় না এবং আমার সাথে আপনার স্মরণও করা হয়।”
১১৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- রাতের বেলা যখন আমাকে উর্ধ্বলোক ভ্রমণ (মেরাজ) করান হল, আমি তখন আমার মহান ও মর্যাদাশালী প্রতিপালকের সমীপে উপস্থিত হলাম। তিনি আমার মর্যাদা সম্বন্ধে তিনটি বিষয়ে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, তাতে বলা হল, তিনি (আমি) প্রেরিত রাসূলদের নেতা, ধর্মভীরুদের অভিভাবক ও বন্ধু এবং কপাল ও হাত-পায়ে শুভ্র চিহ্ন ধারণকারীদের সরদার।”
১১৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এমন কোন ব্যক্তি নেই, যে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে অথচ তা নিয়ে একজন ফেরেশতা ঊর্ধ্বেলোকে আরোহণ করে না। সে তা নিয়ে দয়াময় মহান আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হয়। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন, “তোমরা এটা নিয়ে আমার সে বান্দার কবরের পাশে যাও যাতে এর পাঠকারীর জন্য তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারো এবং এর দ্বারা তার চোখ শীতল করে দাও।”
১১৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই আমার কাছে একজন ফেরেশতা এলেন এবং বললেন, “তোমার প্রতিপালক তোমার সম্পর্কে বলেন, এটা কি তোমার জন্য পছন্দনীয় নয় যে, তোমার কোন উম্মত তোমার উপর একবার দরূদ প্রেরণ করে, আমি তখন তার প্রত দশবার রহমত পাঠাই। আর তোমার কোন উম্মত যদি তোমার উপর একবার সালাম (শান্তি বর্ষণ) প্রেরণ করে, আমি তখন তার প্রত দশবার সালাম (শান্তি) পাঠাই? আমি তখন বললাম, হ্যা (নিশ্চয়ই) পছন্দ করি।”
১১৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই এটা গোপনীয় উক্তির অন্তর্ভূক্ত; তোমরা যদি আমাকে এটা জিজ্ঞেস না করতে, তবে তোমাদেরকে আমি এ সম্বন্ধে জানতাম না। মহান আল্লাহ্ আমার ব্যাপারে দু’জন ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন, কোন মুসলমানের সামনে আমার নাম নেয়া হয় আর সে আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করে, তখন উক্ত দু’ফেরেশতা সে লোকের জন্য বলে, ‘তোমাকে আল্লাহ্ মাফ করুন’। আল্লাহ্ ও তাঁর অন্যান্য ফেরেশতারা এ দু’ফেরেশতার জওয়াবে বলেন, ‘আমীন’।” বর্ণনাকারী বলেছেন, সাহাবাগণ আরয করেছিলেন, ‘ইয়া রাসূলালআহ! ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা্ আ’লান-নাবিয়্যি’ উক্তির অর্থ কি? তিনি তখন উল্লেখিত বক্তব্য দিলেন।
১১৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয়ই যখন তুমি আমাকে দেখলে যে, আমি খেজুর বাগানে প্রবেশ করলাম, তখন জেনে রাখ যে, আমি সেখানে জিবরাঈ’ল (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি তখন বললেন, ‘আমি তোমাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছি। মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলেন, তোমার প্রতি যে, লোক সালাম পাঠায় আমিও তার প্রতি সালাম পাঠাই। আর তোমার প্রতি যে, দরূদ পাঠাই আমিও তার প্রতি রহমত প্রেরণ করি।” নবী করীম (সাঃ) বলেন, “অতঃপর আমি শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে আল্লাহর উদ্দেশে সিজদায় রত হলাম।”
১২০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমার কাছে জিবরাঈ’ল (আ) এসে বললেন, “হে মুহাম্মদ! তোমার প্রতিপালক বলেন; তুমি কি এটা শুনে খুশী নও যে, তোমার কোন উম্মত যখন তোমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আমি তখন তার প্রতি দশবার রহমত প্রেরণ করি? আর তোমার প্রতি তোমার কোন উম্মত একবার সালাম (শান্তি বর্ষণ) পাঠালে ওর বিনিময়ে আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাই?”
১২১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বুররাক আনা হল। ওটা একটি সাদা রংয়ের চতুসপদ প্রাণী উচ্চতায় গাধার চেয়েও বেশি এবং খচ্চর থেকে কম। ওর দু’পায়ের সামনের অংশে তার খুর রয়েছে। আমি তাতে আরোহণ করলাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে চলে এলাম। অতঃপর আমি ওটাকে সে মসজিদে প্রবেশ করলাম, দু’রাকাআত নামায পড়লাম, অতঃপর বেরিয়ে এলাম। অন্তর জিবরাঈ’ল একটি সুরার ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ পছন্দ করলাম। জিবরাঈ’ল তখন বললেন, আপনি ফিরাতকে পছন্দ করে নিয়েছেন।” তারপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে প্রথম আসমানে উড্ডয়ন করল। জিবরাঈ’ল আকাশের দ্বার খুলে দিতে অনুরোধ জানালেন। তাকে বলা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিব্রাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ)। বলা হল, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে (আমাকে) ডেকে পাঠান হয়েছে। অনন্তর আমাদের জন্য আকাশের দ্বার খুলে দেয়া হল। এখানে আমি আদম (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। তারপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে আরোহণ করল। জিবরাঈ’ল আকাশের দরজা খুলে দিতে অনুরোধ জানালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, জিবরাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে আর কে? তিনি জবাব দিলেন, মুহাম্মদ। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বলিলেন হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছে। অতঃপর আমাদের দরজা খুলে দেয়া হল। এখানে আমি আমার খালাতো দু’ভাই -ঈসা ইবনে মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়ার (আ) দেখা পেলাম। তারপর তারা দু’জন আমাদেরকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে আরোহন করল। জিবরাঈ’লকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বলিলেন, মুহাম্মদ (সাঃ)! বলা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ ডেকে পাঠান হয়েছে। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা উম্মুক্ত করা হল। এখানে আমি ইউসুফ (আ)-এর দেখা পেলাম। তাঁকে সৌন্দর্যের অর্ধাংশ দেয়া হয়েছিল। অনন্তর তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে আরোহণ করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে বলা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বললেন মুহাম্মদ (সাঃ)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ? অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল। এখানে আমি ইদরীস (আ) -এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিভাদন জানালেন এবং আমার জন্য দোয়া করলেন। সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আর তাকে আমি অতি উচ্চস্থানে উঠালাম।” অতঃপর আমাদেরকে নিয়ে তা পঞ্চম আসমানে আরোহন করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মদ (সাঃ)! জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠান হয়েছে। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খোলা হল। এখানে আমি হারুন (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যানের জন্য দোয়া করলেন। অনন্তর আমাদেরকে নিয়ে ওটা ষষ্ঠ আকাশে আরোহণ করল। জিবরাঈল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খোলা হল। আমি এখানে মূসা (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যানের জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহন করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে আর কে? তিন বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি বায়তুল মামুরে পিঠ লাগিয়ে বসে ছিলেন। এ ঘরের বৈশিষ্ট্য এরূপ যে, প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে এবং তারা পুনরায় কখনো ফিরে আসে না। এরপর জিবরাঈ’ল আমাকে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় গেলেন। কি কি আশ্চার্য্য ওর পাতাগুলো হাতির কানের মত। আর কি আশ্চর্য! তার ফুলগুলো পবর্তশৃঙ্গের মত। আল্লাহর ইচ্ছায় ওটা যখন ঢেকে যায় তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। মহান আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর মাঝে এমন কেউ নেই, যে ওর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আমার প্রতি যে প্রত্যাদেশ ছিল, তা করা হল এবং আমার প্রতি প্রত্যেক দিন ও রাতে পঞ্চাশটি নামায ফরয করা হল। অতঃপর আমি মূসা (আ) -এর কাছে নেমে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য কি ফরয করেছেন?” আমি বললাম, “পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায।” তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাও এবং হালকা করার জন্য অনুরোধ জানাও। কারণ তোমার উম্মত ওটা আদায় করতে পারবে না। আমি বণী ইসরাঈ’লকে পরীক্ষা করেছি।” এতএব আমি আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং নিবেদন জানালাম, হে আমার রব! আমিার উম্মতের নামায কমিয়ে দিন। তিনি আমার পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। পুনরায় আমি মূসার (আ) কাছে ফিরে গেলাম এলাম এবং বলাম, “আমার পাঁচটি নামায কমিয়ে দিয়েছি” তিনি বললেন, “তোমার উম্মত এ পারবে না। পুনরায় তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাও এবং হালকা করার জন্য অনুরোধ জানাও।” এতএব আমি এভাবে আমার রব ও মুসার (আঃ) কাছে যাতায়াত করতে থাকলাম, যে পর্যন্ত রব বললেন, “হে মুহাম্মদ! দিনরাতে তোমার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায। আর যে লোক কোন ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু তা করে না, আমি তার জন্য একটি পূণ্য লিখি। অতঃপর যদি সে তা করে, কিন্তু সে তা করে না – এর বদলে তার জন্য কিছু লেখা হয় না। আর যদি সে তা করে ফেলে, তবে তার জন্য একটি পাপ লিখি।” অনন্তর আমি নামলাম ও মূসার (আ) কাছে আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতি পালকের কাছে যাও এবং ওটা হালকা করার জন্য আরয কর।” আমি বললাম, “আমি বহুবার আমার রবের কাছে নিবেদন করেছি। এতএব এখন আমি পুনরায় তাঁর কাছে আব্দার করতে লজ্জা বোধ করছি।”
আসহাবের রাসূল ও উম্মতে মোহাম্মদী (সাঃ) প্রসঙ্গে
১২২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তুমি কি জান না (হে ওমর!), নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি করুণার দৃষ্টি ফেলে বলেছেন, “তোমরা যা খুশি আমল কর, তোমাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি।”
১২৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বিশ্বাসী-মু’মিন বান্দা সকল কল্যাণের উৎসস্থল।”
১২৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আমার উম্মতের হিসাব আমার উপর ন্যাস্ত করার জন্য আমি মহান আল্লাহর সমীপে আরয করলাম, যাতে তারা অপরাপর উম্মতের সামনে লাঞ্ছিত না হয়, তখন মহান ও পরাক্রমশালী রব আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, “হে মুহাম্মদ! আমি তাদের হিসাব গ্রহণ করব। অনন্তর তাদের যদি কোন ক্রটি হয়, আমি তোমার কাছেও তা গোপন রাখাব, যাতে তারা তোমার কাছেও অপদস্থ না হয়।”
১২৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন“আমার বিশ্বাসী-মু’মিন বান্দা আমার কাছে কোন কোন ফেরেশতার চেয়েও প্রিয়তর।”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর শাফাআ’তঃ
১২৬. (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমার আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সহচর। মহান আল্লাহ্ আমাকে জাগালেন, অতপর বললেন, “হে মুহাম্মদ! নিশ্চয় আমি কোন নবী ও রাসূল পাঠাননি, বরং সে আমার কাছে একটি বিষয়ে প্রার্থনা করেছে; যা আমি তাকে প্রদান করেছি। অতএব হে মুহাম্দ! তুমি প্রার্থনা কর, তোমাকে তা দেয়া হবে।” তখন আমি বললাম, “আমার চাওয়া হল, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের জন্য শাফা’আতের অনুমতি দিন। আববকর (রা) নিবেদন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (স)! শাফা’আত কি? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, “কেয়ামতের দিন আমি বলব- ইয়া রব! আমার শাফা’আত, যা আপনার কাছে গচ্ছিত রেখেছি।” তখন রব বলবেন, হ্যাঁ। অনন্তর মহান ও প্রতাপশালী প্রতিপালক আমার অবশিষ্ঠ উম্মতকে দোযখ থেকে বের করে আনবেন এবং তাদেরকে বেহেশতে প্রেরণ করবেন।” আহমদ এ হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ১২৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের সেই লোকের জন্য শাফা’আত হবে, যে কবীরা গুনাহ করেছে এবং সে অবস্থায় মারা গিয়েছে। তারা জাহান্নামের প্রথম স্তরে থাকবে, তাদের চেহারা কাল হবে না, চোখগুলো নীল হবে না। তাদেরকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখা হবে না। বন্দীরূপে শয়তানদের সাথে একত্রিত করা হবে না, হাতুড়ি দিয়ে মারা হবে না এবং দোযখের নিম্নদেশে নিক্ষেপ করা হবে না। তাদের কেউ কেউ এতে এক ঘন্টা অবস্থান করবে অতৎপর বেরিয়ে আসবে। কেউ কেউ এতে একদিন অবস্থান করবে অতৎপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। কেউ কেউ সেখানে এক বছর অবস্থান করবে। সেকালটি পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এর ধ্বংসের সময় পর্যন্ত দির্ঘস্থায়ী হবে, যার পরিব্যপ্তি সাত হাজার বছর। তারপর মহান আল্লাহ্ যখন একত্ববাদে বিশ্বাসীদেরকে সেখান থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন তিনি (অন্যান্য) সকল ধর্মাবলম্বীদের মনে এ ধারণা ঢুকিয়ে দেবেন, যার ফলে তার বলতে থাকবে, “আমরা এবং তোমরা সকলেই পৃথিবীতে ছিলাম। অতঃপর তোমরা ঈমান এনেছিল, আর আমরা কুফরী করেছিলাম। আর তোমরা সত্যকে মেনে নিয়েছিলে এবং আমারা তাকে মিথ্যা মনে করছিলাম, তোমরা স্বীকার করেছিলে, আমরা অস্বীকার করেছিলাম, কিন্তু এতে তোমাদের লাভ হল না। আজ আমরা শাস্তির ব্যাপারে সকলেই সমান। তোমরাও তেমনভাবেই শাস্তি পাচ্ছ যেমনভাবে আমরা শাস্তি পাচ্ছি। এ সময় আল্লাহর ক্রোধ এত প্রবল হবে, যার অনুরূপ অতীতে কখনও হননি এবং ভবিষ্যতেও তেমনটি হবেন না, তখন (আল্লাহর ইচ্ছায়) একত্ববাদীগণ সেখান থেকে বেরিয়ে বেহেশত ও পুলসেরাতের মধ্যেবর্তী একটি স্থানের দিকে আসবে, যাকে সঞ্জীবনী ঝরণা বলা হয়। অনন্তর তাদের উপর সে ঝরণার পানি ছিটিয়ে দেয়া হবে, ফলে তারা এভাবে উত্থিত হবে যেরূপ বণ্যার পরে চারাগাছ জন্মায়। অতঃপর যেটি ছায়ার কাছাকাছি থাকে, তা সবুজ হয়। আর যেটি রোদের তাপের নিকটবর্তী, তা হয় হরিদ্রাভ। এভাবে তারা বেহেশতে প্রবেশ করতে থাকবে, তাদের কপালে লেখা থাকবে – আল্লাহ্ কর্তৃক দোযখ থেকে মুক্ত, শুধু এক ব্যক্তি ছাড়া। সে তাদের পরও সেখানে এক হাজার বছর অবস্থান করবে, তারপর এই বলে ডাকবে, “হে হান্নান, হে মান্নান”। তখন তাকে বের করে আনার জন্য আল্লাহ্ এক ফেরেশতাকে পাঠাবেন। ফেরেশতা তার খোঁজে দোযখে প্রবেশ করবে, তারপর সত্তর বছর পর্যন্ত তালাশ করবে, কিন্তু তার কোন খোজ পাবে না। অতঃপর সে ফিরে এসে বলবে, “আপনি আমাকে আপনার অমুক বান্দাকে দোযখ থেকে বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি সত্তর বছর পর্যন্ত খোজ করে তাকে পেলাম না। তাই তাকে বের করা সম্ভব হল না।” তখন আল্লাহ্ বলবেন -“যাও সে অমুক উপত্যকায় একটি পাথরের নিচে আছে, তাকে সেখান থেকে বের করে আন।” ফেরেশতা আবার যাবে এবং তাকে সেখান থেকে বের করে আন।” ফেরেশতা আবার যাবে এবং তাকে সেখান থেকে বের করে আনবে, অতঃপর বেহেশতে প্রবেশ করাবে।”