আল্লাহর ক্ষমা সম্পর্কেঃ
৭৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ইবলিস তার রবের সমীপে বলল, “আপনার ইযযত ও জালালের কসম! আমি আদম সম্প্রদায়কে পথচ্যুত করতে থাকব, যে পর্যন্ত তাদের প্রাণ থাকে।” আল্লাহ বললেন, “আমার ইযযত ও জালালের কসম! তাদেরকে আমি মাফ করতে থাকব, যে পর্যন্ত তারা আমার কাছে মাফ চাইতে থাকবে।”
৭৫. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমরা যদি চাও তবে আমি তোমাদেরকে জানাতে পারি কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ্ মু’মিনদের সাথে সর্বপ্রথম কি বলবেন? আর মু’মিনগণ সর্বপ্রথম কি বলবে? অনন্তর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “আমার সাক্ষাতে তোমরা কি প্রীত” জওয়াবে তারা বলবে, “হ্যাঁ হে আমাদের প্রতিপালক!” আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করবেন, “কি জন্য?” তারা বলবে, “আমরা আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাতের আশা করেছিলাম।” তখন আল্লাহ্ বলবেন, “তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া আমার জন্য অপরিহার্য্য করে নিলাম।”
৭৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমি অত্যন্ত করুণাময় ও মহান ক্ষমাকারী। এটা অসম্ভব যে, আমি একজন মুসলমান বান্দার (পাপ-সমূহ) পৃথিবীতে গোপন রাখব, অতঃপর তার সে সব অসদাচরণ প্রকাশ করে তাকে অপদস্ত করব। আমি আমার বান্দার পাপ মার্জনা করতে থাকি যে পর্যন্ত সে মাফ চাইতে থাকে।”
৭৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় কোন বান্দা পাপ করে, অতঃপর বলে, “আমার প্রতিপালক! আমি পাপ করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন।” তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা কি জানে যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন?” তিনি বলেন, “আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।” তারপর যতদিন আল্লাহ চান ততদিন সে পাপ করা থেকে নিবৃত থাকে। তারপর সে পাপ করে এবং বলে, “হে আমার রব! আমি আরও একটি পাপ করে ফেলেছি, আমায় আপনি ক্ষমা করুন।” তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা জানে কি যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন? সুতরাং নিশ্চয় আমি তাকে মাফ করে দেই। অতঃপর সে তার ইচ্ছেমত আমল করুক।”
৭৮. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- শয়তান বলল, “ইয়া রব! তোমার ইজ্জতের কসম, নিশ্চয়ই আমি তোমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করতে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে।” অতঃপর পূত-পবিত্র প্রভূ বললেন, “আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! আমি তাদেরকে মাফ করতে থাকব যে পর্যন্ত (তারা) আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।”
৭৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- রক্ষণাবেক্ষণকারী উভয় ফেরেশতার মধ্যে এমন কেউ নেই, যে হেফাযতকৃত বিষয় গুলো আল্লাহর কাছে উঠিয়ে নিয়ে যায়, অতঃপর তিনি তার প্রথম পৃষ্ঠায় লিখিত পূণ্য দেখে এবং শেষের পৃষ্ঠায়ও পূণ্য দেখে বরং মহান আল্লাহ্ ফেরেশতাদেরকে বলেন, “তোমরা সাক্ষী থাক। আমি আমার বান্দাকে উভয় পৃষ্ঠার মধ্যখানে যা কিছু ত্রুটি আছে সব ক্ষমা করে দিয়েছি।”
৮০. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক ব্যক্তি নামাজে যত ছিল। সে যখন সেজদা দিল, তখন আরেক জন আগমন করল এবং তার ঘাড়ে আরোহন করল। নিচের জন বলল, “আল্লাহর কসম! কখনও আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করবেন না।” তখন মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা তখন আমার কসম করে বলেছে যে, আমি আমার বান্দাকে মাফ করব না। অথচ অবশ্যই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
৮১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ কসম! অমুককে আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বললেন, “কোন একজন আমার নামে কসম করে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করবো না? নিশ্চয়ই আমি অমুককে মাফ করে দিয়েছি এবং তোমার সত্য কর্ম নষ্ট করে দিয়েছি।”
৮২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- এক লোককে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। তারপর তার মহান রব তাকে বলবেন, “আমি যদি তোমাকে দোযখ থেকে নিষ্কৃৃতি দেই, বিনিময়ে তুমি আমাকে কি দেবে? সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার কাছে যা চাও তোমাকে আমি তাই দেব।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। আমার ইযযতের কসম! আমি তোমার কাছে এরূপ বস্তু চেয়েছিলাম যা এর চেয়ে সহজ, অথচ তুমি আমাকে তা দাওনি। আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি যদি চাও আমি তোমাকে দান করব, তুমি যদি প্রার্থনা কর তবে আমি তা কবুল করব, তুমি যদি মাফ চাও তবে আমি তোমাকে মাফ করব।”
৮৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- বান্দা যখন বলে, “রাব্বিগ-ফিরলী, (প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন)” প্রতিপালক তখন বলেন, “আমার বান্দা এটা উপলব্ধি করেছে যে, আমি ছাড়া আর কেউ পাপসমূহ মাফ করতে পারে না।”